রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত দেশের অন্যতম খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাইলস্টোন স্কুলে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের সম্ভাবনাময় এক তরুণ, সামির। সোমবার দুপুরে ক্লাস চলাকালীন সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান (F-7 BGI) হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় সামির স্কুলের প্রধান ভবনের কাছাকাছি অবস্থান করছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে আকাশ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়া একটি বিমান বিদ্যালয় ভবনে আঘাত হানে। মুহূর্তেই এলাকা কেঁপে ওঠে, এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় বিমানটিতে এবং তার প্রভাব আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সামির। সামির ছিলেন চানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোস্তফা কামালের নাতি এবং মেহেন্দিগঞ্জ সমিতির আজীবন সদস্য (নং-২২১) রেশমা বেগমের একমাত্র সন্তান। সামিরের এমন করুণ মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একইসাথে শোকস্তব্ধ মেহেন্দিগঞ্জবাসী।
এই দুর্ঘটনায় সামিরসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত ও দগ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আহতদের মধ্যে অনেককে বার্ন ইনস্টিটিউট ও স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিমান বাহিনী সূত্রে জানা যায়, প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারান এবং বিমানটি নিচে নেমে আসে। যদিও পাইলট পরে প্যারাসুটের সাহায্যে বেরিয়ে আসেন, কিন্তু নিচে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হন।
সামিরের এমন অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, বরং পুরো মেহেন্দিগঞ্জের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্মরণে ছড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য শোকবার্তা। সহপাঠী ও এলাকাবাসীরা বলছেন—"সামির ছিল ভদ্র, নম্র ও মেধাবী ছেলে। সে বড় হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছিল। অথচ একটি দুর্ঘটনা তার সমস্ত স্বপ্ন কেড়ে নিলো।"
সরকারিভাবে দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে সকল মহল থেকে দাবি উঠেছে। সামিরের মৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানি নয়, এটি আমাদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা—নিরাপত্তার ঘাটতি যেন আর কোনো সম্ভাবনাময় প্রাণ কেড়ে না নিতে পারে।
সিয়াম বিশ্বাস: মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি
Comments: