যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নে অপরিকল্পিত ঘেরের কারণে নওয়াপাড়া-মণিরামপুর সড়কের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ শতাধিক গাছ-রাস্তা। এলাকাবাসী ও পথচারীদের আশঙ্কা বিলীন হতে পারে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর আগে সুন্দলী এস টি স্কুল এন্ড কলেজের রাস্তায় দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু করে খালের ভেড়ি বাঁধ পর্যন্ত প্রায় ৮০ একর জমিতে ঘেরে দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন স্থানীয় ফুলের গতি গ্রামের প্রবীর রায়
জানাযায়, নওয়াপাড়া ও মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ অঞ্চলে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে মৎস্য ঘের। বেশিরভাগ ঘেরের পাড় তৈরি হয়েছে সরকারি রাস্তা ব্যবহার করে। স্বার্থান্বেষী এ সব ঘের মালিকদের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা গুলো ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ঘেরের মধ্যে বিলিন হতে চলেছে। এ সকল রাস্তার পাশের গাছ গুলো মাটি ধসে ঘেরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল ঘেরের জন্য একপাশের মাটি সরে গিয়ে সড়কটি ভেঙে সরু হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত অংশে থাকা শতাধিক গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় গাছগুলো ভেঙে ভেঙে ঘেরের মধ্যে পড়ছে। স্থানীয়,সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ‘গণ সাহায্য সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন বনায়নের লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে মেহগনি, আকাশি, রেইনট্রি,সহ বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ রোপন করে। এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় একজনকে নিয়োগও করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় সংস্থাটির কোনো কর্মকাণ্ড চলমান নেই। তাই গাছগুলোর পরিচর্যার জন্য নিয়োগকৃত ওই ব্যক্তিও গত ৬-৭ বছর থেকে এসব গাছের আর কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না।
স্থানীয়, ফুলের গতি গ্রামের বাসিন্দা নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক তিনি বলেন,ভাঙা রাস্তা এবং রাস্তার পাশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ শত শত গাছ আমাদের জন্য আতঙ্কের। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় যানবাহন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ভাঙা রাস্তা ও গাছের কারণে কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। তাই গাছগুলো কাটা ও ভাঙা সড়কটি মেরামতের জোর দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঘের মালিক ফুলেরগাতি গ্রামের প্রবীর রায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুঠ ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক মিলন মল্লিক বলেন, এই রাস্তা দিয়ে সবসময় গাড়ি চালাই। দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি ভেঙে ছোট হয়ে গেছে। একটা গাড়ি এলে আরেকটি গাড়িকে সাইড দেওয়া যায় না। এছাড়া রাস্তার পাশের গাছগুলো ভেঙে পড়ছে। কখন যে আমাদের ওপর পড়ে সেই ভয়ে অস্থির থাকি।
পথচারী ও এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঘের মালিকরা অপরিকল্পিত ভাবে ঘের করে ব্যবসা করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। যে কারণে এ সব রাস্তায় প্রায় দূর্ঘটনা ঘটছে। অভয়নগর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাযায়, উপজেলার ভবদহ পানিবদ্ধ অঞ্চল গুলোতে এর প্রভাব বেশি যেমন, চলিশিয়া, পায়রা ও সুন্দলীতে ডুমুরতলা হাটগাছা রামসারা রাস্তা ক্ষতি করছে এমন প্রায় ১ হাজার মৎস্য ঘের রয়েছে।
১৯৯৬ এর বিধি ২৮ অনুযায়ী নিজ ভূমির কমপক্ষে ১০ ফুট অভ্যন্তরে পুকুর বা জলাশয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ সরকারি রাস্তার সীমানারকিনারা হতে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরত্বে এবং ৪৫ ডিগ্রি ঢালে পাড় রেখে পুকুর/জলাশয় খনন করতে হবে। দন্ড বিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৩১ অনুযায়ী সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন ফৌজদারি দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে ৫ বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)পার্থ প্রতিম শীল দৈনিক নতুন কাগজ কে বলেন, এ ব্যাপারে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে দ্রুতই বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রিলাক্স মিডিয়া/দিপু মন্ডল
Comments: