উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ওরাঁও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান কারাম পূজা। সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রামে হাজারো মানুষ ঢোল-ঢাক, নৃত্য ও গানে মাতোয়ারা হয়ে অংশ নেন এ মিলনমেলায়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভাদ্র মাসের শেষ আর আশ্বিনের শুরুতে শুভ দিনক্ষণ মেনে আয়োজন করা হয় এই পূজার। সকাল থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা, আর সন্ধ্যা গড়াতেই মণ্ডপ প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে ভক্ত-অতিথিদের পদচারণায়।
কারাম পূজা মূলত কারাম গাছকে ঘিরে এক বিশেষ ধর্মীয় আচার। ওরাঁও সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, এই গাছ শুভ, কল্যাণময় ও জীবনের প্রতীক। গাছের ডাল কেটে এনে মণ্ডপে স্থাপন করে পূজা-অর্চনা করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস—এ পূজা করলে পরিবারে আসে শান্তি, দূর হয় বিপদ-আপদ ও রোগব্যাধি, আর ফসল হয় সোনালী। আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এই পূজাকে ঘিরে চলে উৎসবমুখর নানা আয়োজন। পুরুষেরা ঢোল-ঢাক বাজিয়ে গান ধরেন, নারীরা নাচে-গানে শামিল হন, আর শিশু-কিশোররা রঙিন পোশাক পরে আনন্দে মাতেন। স্থানীয় হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসাথে অংশ নেন এ উৎসবে, যা তৈরি করে এক অপূর্ব সামাজিক সম্প্রীতির পরিবেশ।
উৎসব শেষে পূজিত কারাম গাছের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে আনুষ্ঠানিকতার। তবে পূজা শেষ হলেও তার আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং সম্প্রীতির আবহ থেকে যায় আরও দীর্ঘদিন। ওরাঁও সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, শত শত বছর ধরে চলে আসা এ পূজা তাদের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক মিলনমেলা হিসেবেও পরিচিত। একজন তরুণ ওরাঁও অংশগ্রহণকারী বলেন, “আমরা প্রতিবছর অধীর আগ্রহে এই পূজার অপেক্ষায় থাকি। নাচ, গান আর পূজার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, কারাম পূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজ ও সংস্কৃতির অনন্য উদাহরণ। এ সময় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেউকেটার সভাপতিত্বে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
রিলাক্স মিডিয়া/রকিবুল ইসলাম
Comments: