লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে মুসলিম চ্যারিটি দৌড়ে ১২ বছরের বেশি বয়সী নারী ও মেয়েদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেয়র লুৎফুর রহমান। মানবাধিকারকর্মী ও নারীবাদী সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে “যৌনতাবাদী” ও “বৈষম্যমূলক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ১২তম মুসলিম চ্যারিটি রান ইভেন্টটি “পরিবার-বান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক” দাবি করলেও, ১২ বছরের বেশি বয়সী নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের পরিপন্থী।
রবিবার ভিক্টোরিয়া পার্কে অনুষ্ঠিত এই চ্যারিটি দৌড়ে অংশ নেন প্রায় ১,৬০০ জন দৌড়বিদ, যারা ৪০টিরও বেশি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। মেয়র লুৎফুর রহমান পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বলেন,
“এই অনুষ্ঠানটি সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা।”
তবে, অনুষ্ঠানে ১২ বছরের বেশি বয়সী নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞার কারণে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই মন্তব্য করেন, এটি সমতা আইন লঙ্ঘন এবং মুসলিম সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত করার একটি উদাহরণ।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, “এই দৌড় পরিবার-বান্ধব এবং সকল বয়সের ছেলেদের ও ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত।” তারা আরও উল্লেখ করে, “দৌড়বিদদের উৎসাহ দিতে পার্কে সবাইকে স্বাগত জানানো হয়েছে।”
মেয়র লুৎফুর রহমান, সমালোচনার জবাবে দ্য টাইমস-কে বলেন,
“গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই আয়োজন মানুষকে একত্র করেছে। সমালোচনার কোনো জায়গা নেই; এটি উদযাপনের একটি মুহূর্ত।”
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো একমত নন।
ব্যারনেস গোহির ওবিই, মুসলিম উইমেন্স নেটওয়ার্ক ইউকে-এর প্রধান নির্বাহী, বলেন—
“১২ বছরের বেশি বয়সী নারী ও মেয়েদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা সম্ভবত সমতা আইন লঙ্ঘন।”
অন্যদিকে, আয়েশা আলী-খান, মানবাধিকার প্রচারক, টুইটারে লেখেন—
“ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য এটি ভুল সিদ্ধান্ত। সুস্থ ও ফিট থাকা ইসলামি জীবনের অংশ, শুধু পুরুষদের জন্য নয়!”
অনেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে এমন একটি অনুষ্ঠানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করতে পারেন যেখানে নারীদের স্পষ্টভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
একজন মন্তব্য করেছেন,
“সম্প্রদায়ের উদ্যোগে ঐক্য গড়ে তোলা উচিত, বৈষম্য নয়। সমতা ও অন্তর্ভুক্তি ব্রিটিশ সমাজের মৌলিক মূল্যবোধ।”
টাওয়ার হ্যামলেটসের এই বিতর্ক লন্ডনের বহুসাংস্কৃতিক সমাজে লিঙ্গ সমতা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার ভারসাম্য নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও সম্প্রদায় নেতাদের আহ্বান— ভবিষ্যতের এমন আয়োজন যেন সত্যিকার অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই সমানভাবে অংশ নিতে পারেন।
অনলাইন ডেস্ক
Comments: