০১ নভেম্বর ২০২৫ | ১৭ কার্তিক ১৪৩২
বাংলাদেশ
ববিতে কাশফুলের সৌন্দর্যের আড়ালে অনুন্নয়ন

image

দক্ষিণবঙ্গের মায়াবী নদী কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে অবস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস শরতের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে অমলিন। চোখজুড়ানো লাল ইটের দালানগুলোর প্রান্তে প্রান্তে সাদা কাশফুল বাতাসে দোল খেলার দৃশ্য দেখে মনে হবে আসমান থেকে মেঘের দল নেমে এসেছে ৫০ একরের জমিনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে দুলছে কাশফুলের ঢেউ । যেখানে শিক্ষার্থী, স্থানীয় মানুষ ও দূর থেকে আগত দর্শনার্থীরা কেউ ছবি তুলছেন, কেউ হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্যে। তবে এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের অনুন্নয়ন।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছরই প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন রূপে সাজে প্রাণের ক্যাম্পাস। প্রতিবার শরতে কাশফুল ফুটে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ বছর পেরোলেও উন্নয়নের ফুল ফোটেনি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, প্রকৃতি এখানে উদার কিন্তু বাস্তবতা খুবই কঠিন। তাদের দাবি, কাশফুলে সাজানো এই সুন্দর প্রাঙ্গনের গভীরে লুকিয়ে আছে হাজারো শিক্ষার্থীর এক দীর্ঘশ্বাস, অবহেলা, অনুন্নয়ন, নিঃশব্দ যন্ত্রণা আর অপেক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়টি বাইরে থেকে যতটা সুন্দর, ভেতরে ততটাই ভঙ্গুর ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা খালি পড়ে আছে। অযত্নে অবহেলায় এসব জায়গায় কাশফুল জন্মেছে। এই কাশফুলের সৌন্দর্যের আড়ালেই রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও অনুন্নয়নের চিত্র। হাতে গোনা কয়েকটি ভবন ছাড়া তেমন স্থাপত্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছোট বড় প্রায় ১১টি ডোবা রয়েছে। যেখানে জমে থাকে নোংরা পানি, আবর্জনা ও জলজ আগাছায় ভরে গেছে। এছাড়া তিনটি বড় বড় পুকুরের মধ্যে দুটিরই অবস্থা বেহাল। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব জলাশয় হারাতে বসেছে তাদের প্রাকৃতিক রূপ ও কার্যকারিতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৭ জন শিক্ষার্থী সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে ৪ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী ছিলেন। তারা জানান, প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি দাড়াতে পারেনি। চারদিকে শুধু সংকট আর সংকট। পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নেই । ফলে ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে শহরের বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে। নেই পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধাও। এদিকে একাডেমিক কার্যক্রমও ভঙ্গুর। ২৫টি বিভাগের জন্য মাত্র ৩৬টি ক্লাসরুম। একটি বিভাগের ছয়-সাত ব্যাচের জন্য মাত্র এক ক্লাসরুম বরাদ্দ। শিক্ষক, ডিনদের নেই বসার জায়গা। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সুযোগ- সুবিধা থাকে তার নূন্যতম সুবিধা নেই বলে জানান তারা।

বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুয়াদ হোসেন সাগর বলেন, “প্রতিদিন কাশফুলের সৌন্দর্য দেখি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভঙ্গুর অবস্থা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায় । ভবন নেই, গবেষণার সুযোগ নেই । পর্যাপ্ত ল্যাপ নেই। ভর্তি হবার পর থেকেই কোনো উন্নয়ন দেখছি না। ভিসিরা শুধু আশা দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবে কোনো উন্নয়ন দেখতে পাইনি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. মোস্তাকিম রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্লাসরুমের চরম সংকট বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উদ্যোগের অভাব। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখানে তেমন কিছুই হয় না। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তি পোহানোর যৌক্তিকতা নেই। টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ, ভাড়া ভবন বা অস্থায়ী ক্লাসরুমের মতো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অবহেলা আর উদ্যোগের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় তলিয়ে যাচ্ছে,আর উপর থেকে আমরা সবাই কাশফুল দেখতেছি। এগুলো হলো অনুন্নয়নের ফলে গজানো আগাছা। সোভাগ্যক্রমে সেগুলো এখন সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। এগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংকট আর রক্ষণাবেক্ষণের চিত্র তুলে ধরে।











রিলাক্স মিডিয়া/ববি

ভিডিও
Comments:
Sponsered Ad
Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement

loading