০১ নভেম্বর ২০২৫ | ১৭ কার্তিক ১৪৩২
অন্যান্য
জাতীয় ফুল "শাপলার" অস্তিত্ব সংকটে

image

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা একটা সময় দেশের নদী, খাল, বিল ও পুকুরে অনায়াসে ফুটে থাকতে দেখা যেতো। সাদা, লাল, নীল বা বেগুনি রঙের শাপলা ছিল গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির সাথে। দেশের জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া, দূষণ, এবং মানুষের অবহেলায় এই জাতীয় ফুলটি বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। এক সময় যেসব এলাকায় শাপলার ছায়ায় জল ঝিকমিক করত, এখন সেখানে কেবল ময়লা, আবর্জনা আর দূষিত পানি।
শাপলা শুধু একটি ফুল নয়, এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক। জাতীয় পতাকার ভেতর যেমন শাপলার অবস্থান, তেমনি সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পকলায়ও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কবিদের কবিতার ভাষায় লিখেছেন শাপলার সৌন্দর্য নিয়ে, লোকগানে এসেছে এর কোমলতা ও পবিত্রতার প্রতীকী রূপ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কার্যক্রম, শিল্পবর্জ্য, ও অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের কারণে শাপলার আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জলাশয় হারিয়ে যাওয়ায় শাপলার অস্তিত্ব সংকট;

শরৎকালে বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতি ও প্রকৃতির সঙ্গে জলাশয়ের গভীর সম্পর্ক রয়েছে শাপলা ফুলের উপস্থিতির। কিন্তু শহরকেন্দ্রিক সম্প্রসারণ, খাল-বিল ভরাট এবং কৃষি জমি বাড়ানোর কারণে দেশের বহু জলাশয় এখন বিলুপ্ত। ফলে শাপলা ফুলের প্রাকৃতিক আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় পানির অভাবে ফুল ফুটলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

দূষণ ও কীটনাশকের প্রভাব;

নদী-খাল-বিলের পানিতে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক বর্জ্য। মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে পানির মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা শাপলা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের প্রভাবও নদীনালা ও বিলের পানিতে পড়ছে, ফলে শাপলা বাঁচতে পারছে না।

পরিবেশের ভারসাম্যেও প্রভাব;

শাপলা শুধু সৌন্দর্যের নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। জলজ প্রাণীদের আশ্রয় দেয় এবং পানির অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এই ফুল হারিয়ে যাওয়ায় জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, মাছসহ অন্যান্য প্রাণীর প্রজননও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মানুষের জীবনে শাপলার উপস্থিতি;

শাপলা একসময় গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিল। অনেকে খাদ্য হিসেবে শাপলার মূল, কাণ্ড ও বিচি খেতেন। এটি ছিল সহজলভ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু এখন শহর তো দূরের কথা, অনেক গ্রামেও শাপলার দেখা মিলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

সংরক্ষণের উদ্যোগ প্রয়োজন;

পরিবেশবিদদের মতে, জাতীয় ফুল হিসেবে শাপলাকে রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জলাশয় সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে এই ফুলকে বাঁচানো সম্ভব। স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের শাপলার গুরুত্ব সম্পর্কে জানানো হলে সচেতনতা তৈরি হবে। পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে জলাশয় পুনরুদ্ধারে প্রকল্পের মাধ্যমে শাপলার পুনর্জন্ম ঘটানো যেতে পারে।

শাপলা শুধু একটি ফুল নয়—এটি বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের অংশ। আমাদের জাতীয় প্রতীক, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে শাপলার সম্পর্ক গভীর। এই ফুল হারিয়ে যাওয়া মানে আমাদের ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও গর্বের হারিয়ে যাওয়া। সময় এসেছে এই জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সকলে একসঙ্গে এগিয়ে আসার। কারণ শাপলার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা মানেই প্রকৃতি ও বাংলাদেশের সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখা। এখনি সময় শাপলার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উৎকৃষ্ট সময়।














রিলাক্স মিডিয়া/তিমির বনিক

ভিডিও
Comments:
Sponsered Ad
Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement

loading